December 22, 2024, 3:22 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন দেশ চলে থাকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংগের মিলিত অংশগ্রহনে। সেখানে সফলতা সবগুলোর অংগের একে অপরে পরিপূরক। তিনি বলেন আইনের শাসন ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ব্যর্থ হবে, গনতন্ত্র ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে যাবে।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা ফেল করলে আইনের শাসন ফেল করবে। আইনের শাসন ফেল করলে ডেমোক্রেসি ফেল করবে। ডেমোক্রেসি ফেল করলে রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে যাবে। সেজন্য আমরা আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবো।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) রাতে ঢাকাস্থ খুলনা বিভাগীয় আইনজীবী সমিতি আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের তিনি এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন পেশার সুমহান মর্যাদা রক্ষা করতে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে বার (আইনজীবী) ও বেঞ্চকে (বিচারক) সোচ্চার থাকতে হবে। আইনজীবীদের প্রতি একান্ত প্রত্যাশা থাকবে যে, আদালতের পবিত্র অঙ্গন থেকে অসাধু ও প্রতারক চক্রকে উচ্ছেদের মাধ্যমে এ অঙ্গনকে কলুষমুক্ত করবেন।
আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, খেটে খাওয়া সর্বস্ব হারানো মানুষকে আইনের সেবা প্রদানের সুযোগ আপনাদেরই করে দিতে হবে। জীবনযুদ্ধে ক্লিষ্ট মানুষগুলোর জায়গায় একবার নিজেকে ভাবুন, মুহূর্তে তাদের কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়ে যাবেন। বিচারপ্রত্যাশী মানুষের হয়রানি নিরসনে আপনাদের হৃদয় নিংড়ানো আন্তরিকতা খোদার কাছে ইবাদতের মর্যাদা পাবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নানা কারণে বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা বেড়েছে। আমাদের সচেতনতা, কর্মনিষ্ঠায় মামলা জট হ্রাস মেলে, হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী ন্যায় বিচার পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারে।
হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ পুনর্গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, বেঞ্চ গঠন করতে গেলে আমাকে অনেক কিছু মনে রাখতে হয়। করোনার সময় অনেক বিচারপতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেঞ্চ গঠনের বেগ পেতে হয়েছে। আশা করি আমরা কিছু দিনের ভেতরেই নতুন বিচারক পাবো। তখন হাইকোর্ট বিভাগে বেঞ্চের সংখ্যা আরও বাড়বে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যেভাবে বেঞ্চ গঠন করলে ভালো হয়, সেটাই আমি করার চেষ্টা করি।
প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের বসার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, আইনজীবীদের জায়গা সংকটের পাশাপাশি আমি মনে করি যারা গ্রামগঞ্জ থেকে সাধারণ মানুষ বিচারের আশায় উচ্চ আদালতে আসে, তাদেরও বসার জায়গা করা দরকার। এজন্য আমি যখন শপথ নিই, তখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার প্রার্থীদের জন্য সব আদালত এলাকায় বসার জায়গা করার জন্য শেড নির্মাণের অনুরোধ করি। তিনি তাৎক্ষণিক রাজি হয়ে যান।
তিনি বলেন, এখন কথা হলো টাকা তো আমার হাতে থাকে না। আলাদিনের চেরাগ পেলে আমি সাথে সাথে আপনাদের দাবি পূরণ করে দিতাম।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, তারপরও কথা হলো আমাদের প্রধান সমস্যা হলো জায়গার। আমাদের এখন যতটুকু জায়গা আছে তার মধ্যে আগামী ১০০ বছরের প্ল্যান করতে হবে। প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমাদের মাস্টার প্ল্যান করে আগাতে হবে।
আইনজীবীদের ভবন নির্মাণের দাবির বিষয়ে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আপনাদের দুঃখ, কষ্ট আমি বুঝি। এজন্য আপনাদের জন্য যতটুকু আমার করার আছে সেটুকু আমি করবো।
ঢাকাস্থ খুলনা বিভাগীয় আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. এহিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আমির উল ইসলাম। এতে আরও বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার, বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, কুষ্টিয়া-১ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সারোয়ার জাহান বাদশা প্রমুখ।
Leave a Reply